আগুনের ফুলকি ছুটে>কাজী নজরুল ইসলাম [Aaguner Fulki Chhute> Kazi Nazrul Islam]

আগুনের ফুলকি ছুটে,ফুলকি ছুটে

ফাগুনের ফুলকি ফুটে

নবযুগ পত্রপুটে,ফাগুনের ফুলকি ফুটে।।

উলকার উলকি লেখায়

নিশীথে পথকে দেখায়

আকাশে হ্যাজরাতালির আগ্নেয়দুল দুলকি ছুটে,

আগুনের ফুলকি ছুটে,ফুলকি ছুটে।।

ছোট আজ ফুলকি যারা

না দেখায় অগ্নিগিরির ভাই তাহারাই ভগ্নি তারা।

আকাশের মানিকমুখি জ্যোতির ধারা

আমাদের আশারপ্রদীপ নয়নতারা।

পাথরের ঘুম ভাঙানো প্রাণ ফোয়ারা ।।

ফুটিয়া ঐ এলো রে,ছুটিয়া ঐ এলো রে

চবুতার আর কবুতার আকাশের পথ পেল রে।।

আসে কার পালকি ছুটে

কে আসে উড়িয়ে ধূলি

বাংলার শ্যামলা মাঠে।

সাওয়ার হয়ে আরবি উঠে

রাত্রের ঘুম ভাঙিয়ে

যাত্রিদের দেয় জাগিয়ে।

ঘুমাতে পায় না বলে

বুড়ারা রক্তআঁখি।

তবু গায়ে নিদ্রা ভাঙায়

ভোরের পাখি সুরের সাঁকি।।

ইহাারাই ছড়িয়ে পরে

জীবনের খই ফুঁটিয়ে

ইহারাই ফুলের কুঁড়ি

আছে সব দল গুঁটিয়ে।।

ইহারাই টসটসে রস মৌটুসি কি?

এরা কি উদয়তারার ঝিঁকিমিকি?

এদেরই গলার সুরে

গান গেয়ে বুলবুল কি উঠে?

আগুনের ফুলকি ছুটে,ফুলকি ছুটে।।

খুশির খোশোরে যে রোজ

খুনসুড়ি কি করে এরাই

চলচল চুমকুরি দেয়

ফুলকুড়িঁকে ধরে এরাই।

বিকেলে ঝিঙের মাচায় ফিঙের সাথে

দেখেছি নাচতে এদের

শুনেছি গুনগুনাতে এদের সুরে মৌমাছিকে।

উঁকি দেয় নতুন জীবন

এদেরই চোখের চিকে।।

এলো রে এলোমেলো পাগলা হাওয়া

এলো রে কেঁয়াপাতায় নৌকো বাওয়া

উড়নি উড়িয়ে এল ঘূর্ণি হাওয়া

এলো রে দূরন্ত সব সিরনি খাওয়া।।

এলো কি চোরকাঁটা না আনারদানা পাথরকুচি

এলো রে ফলের আশা ফুলের গুছি

কি খুশির খই ফোঁটাবে কথায় কাথায়

টানাবে দোলনা বুঝি

ডুমুর গাছে ঝুমকো লতায়।।

এলো সব আলোক লতা দুষ্টুমি—

আগুনের দ্বীপ জ্বালিয়ে

ফাগুনের ফালি নিয়ে

হাসিয়াল দৃষ্টি দিয়ে

বিষ্টি ঝরাবে গো

মিষ্টির বাজার এবার নেবে লুটে।।

এলো রে চিত্রপাখা প্রজাপতি চিত্রকূটে

আগুনের ফুলকি ছুটে,ফুলকি ছুটে।।