বর্তমানের কবি আমি ভাই ,ভবিষ্যতের নই ‘নবী !’
কবি ও অকবি যাহা বল মোরে মুখ বুঝে তাই সই সবই!
কেহ বলে,’তুমি ভবিষ্যতে যে
ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে!
যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে বাণী কই কবি?’
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!
কবি-বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা প’ড়ে শ্বাস ফেলে!
বলে, ‘কেজো ক্রমে হচ্ছে অকেজো পলিটিক্সের পাঁশ ঠেলে!
পড়ে নাকো বই, ব’য়ে যায় ওটা’
কেহ বলে, বৌ এ গিলিয়াছে গোটা!’
কেহ বলে, ‘তুই জেলে ছিলি ভালো, ফের যেন তুই যাস্ জেলে’।
গুরু ক’ন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা!
প্রতি শনিবারই চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা!’
আমি বলি, প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি!
অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি!
সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা ক’ন ‘আড়ি চাঁচা’!
যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি নাড়ি কাছা!।
মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘মোল-লা’রা কন হাত নেড়ে,
‘দেব -দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জা’ত মেরে!
ফতোয়া দিলাম– কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও!’
“আমপারা” পড়া হাম্ বড়া, মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে।’
হিন্দুরা ভাবে, ‘ফার্শী- শব্দে কবিতা লেখে ও পা’ত নেড়ে!’
আনকোরা যতো ননভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন খুশী।
‘ভায়োলেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি বিপ্লবী- মন্ তুষি!
‘এটা অহিংস’, বিপ্লবী ভাবে,
‘নয় চরকার গান কেন গা’বে?’
গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কনফুসি!
স্বারাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের অংকুশি’!
নর ভাবে, আমি বড় নারী- ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী বিদ্বেষী!
‘বিলেত ফেরনি?’ প্রবাসী- বন্ধু ক’ন,’এই তব বিদ্যে ছি!’
ভক্তরা বলে ‘নবযুগ রবি’!
যুগের না হই, হুযুগের কবি
বটি তো রে দাদা, আমি মনে ভাবি, আর ক’শে কশি হৃদ-পেশি!
দু’কানে চশমা আঁটিয়া ঘুমানু, দিব্যি হ’তেছে নিদ্ বেশী।
কি যে লিখি ছাই মাথা ও মুন্ডু, আমিই কি বুঝি তার কিছু?
হাত উঁচু আর হল না তো ভাই, তাই লিখি ক’রে ঘাড় নিচু!
বন্ধু !তোমরা দিলে নাকো দাম,
রাজ -সরকার রেখেছেন মান!
যাহা কিছু লিখি অমূল্য বলে অ-মূল্যে নেন!
আর কিছু শুনেছ কি, হুঁ হুঁ, ফিরিছে রাজার প্রহরী সদাই কার পিছু?
বন্ধু !তুমি তো দেখেছ আমায় আমার মনের মন্দিরে,
হাড় কালি হ’ল শাসাতে নারিনু তবু পোড়া মন বন্দীরে!
যতবার বাঁধি ছেঁড়ে সে শিকল,
মেরে মেরে তাঁরে করিনু বিকল,
তবু যদি কথা শোনে সে পাগল!
মানিল না রবি -গান্ধীরে!
হঠাৎ জাগিয়া বাঘ খুঁজে ফেরে নিশার আঁধারে বন চিরে!
আমি বলি, ওরে কথা শোন্ ক্ষ্যাপা, দিব্যি আছিস খোশ্ হালে?
প্রায় ‘হাফ ‘নেতা হয়ে উঠেছিস, এবার এ দাঁও ফসকালে
‘ফুল’ নেতা আর হবিনে যে হায়!–
বক্তৃতা দিয়া কাঁদিতে সভায়
গুঁড়ায়ে লঙ্কা পকেটেতে বোকা এই বেলা ঢোকা! সেই তালে
নিস তোর ফুটো ঘরটাও ছেয়ে,
নয় পস্তাবি শেষকালে।
বোঝে নাক’ যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে,
গান শুনে সবে ভাবে, ভাবনা কি? দিন যাবে এবে পান খেয়ে!
রবে নাক’ ম্যালেরিয়া মহামারী,
স্বরাজ আসিছে চ’ড়ে জুড়ি -গাড়ি,
চাঁদা চাই তারা ক্ষুধার অন্ন এনে দেয়, কাঁদে ছেলে মেয়ে!
মাতা কয়, ওরে চুপ্ হতভাগা, স্বরাজ আসে যে, দেখ্ চেয়ে।
ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত একটু নুন!
বেলা বয়ে যায়, খায়নিকো বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।
কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়,
স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায়!
কেঁদে বলি ওগো ভগবান, তুমি আজিও আছো কি? কালি ও চুণ
কেন ওঠে নাকো তাহাদের গালে ,যারা খায় এই শিশুর খুন?
আমরা তো জানি স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস!
কত শত কোটি ক্ষুধিত শিশুর ক্ষুধা নিঙারিয়া কাড়িয়া গ্রাস!
এলো কোটি টাকা এলোনা স্বরাজ!
টাকা দিতে নারে ভূখারী সমাজ!
মা’র বুক হ’তে ছেলে কেড়ে খায়, মোরা বলি, বাঘ খাও হে ঘাস!
হেরিনু, জননী মাগিছে ভিক্ষা ঢেকে রেখে ঘরে ছেলের লাশ!
বন্ধু গো আর বলিতে পারিনা, বড় বিষ জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া খেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে!
রক্ত ঝরাতে পারিনা তো একা
তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা,
বড় কথা বড় ভাব আসে নাকো মাথায়, বন্ধু বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু যাহারা আছো সুখে!
পরোয়া করিনা, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুক কেটে গেলে,
মাথার ওপরে জ্বলিছেন রবি,রয়েছে সোনার শত ছেলে!
প্রার্থনা ক’রো– যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!
(সর্বহারা)