ঊষসী // রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( মহুয়া )

ভোরের আগের যে প্রহরে

স্তব্ধ অন্ধকার –‘ পরে

সুপ্তি-অন্তরাল হতে দূর সূর্যোদয়

বনময়

পাঠায় নূতন জাগরনী,

অতি মৃদু শিহরনী

বাতাসের গায়ে ;

পাখির কুলায়ে

অস্পষ্ট কাকলি ওঠে আধোজাগা স্বরে,

স্তম্ভিত আগ্রহ ভরে

অব্যক্ত বিরাট আশা ধ্যানে মগ্ন দিকে দিগন্তরে

ও কোন তরুন প্রানে করিয়াছে ভর,

অন্তর্গূঢ় সে প্রহর

আত্ম-অগোচর ।

চিত্ত তার আপনার গভীর অন্তরে

নিঃশব্দে প্রতীক্ষা করে

পরিপুর্ণ সার্থকতা লাগি ।

সুপ্তি-মাঝে প্রতীক্ষিয়া আছে জাগি

নির্মল নির্ভয়

কোন্ দিব্য অভ্যুদয় ।

কোন্ সে পরমা মুক্তি,কোন সেই আপনার

দীপ্যমান মহা আবিস্কার ।

প্রভাত মহিমা ওর সম্বৃত রয়েছে নিশ্চেতনে,

তাহারি আভাস পাই মনে ।

আমি ওই রথশব্দ শুনি,

সোনার বীনার তারে সংগীত আনিছে কোন্ গুণী ।

জাগিবে হৃদয় ,

ভুবন তাহার হবে বাণীময় ;

মানসকমল একমনা

নবোদিত তপনের করিবে প্রথম অভ্যর্থনা ।

জাগিবে নূতন দিবা উজ্জ্বল উল্লাসে

বর্ণে গন্ধে গানে প্রাণে মহোৎসবে তার চারিপাশে ।

নিরুদ্ধ চেতনা হবে হব চ্যুত

লালসা-আবেশে জড়ীভূত

স্বপ্নের শৃঙ্খল পাশ ।

বিলুপ্ত করিবে দূরে উন্মুক্ত বাতাস

দূর্বল দীপের গাঢ় বিষতপ্ত কলুষনিশ্বাস ।

আলোকের জয়ধ্বনি উঠিবে উচ্ছ্বসি—

নাম কি ঊষসী ।।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *