কথোপকথন/২৯-পূর্ণেন্দু পত্রী [kathopokathon/29-purnendu potri]

—দূরে চলে যাও। তবু ছায়া

আঁকা থাকে মেঘে। যেন ওড়ে

বাতাসের সাদা বারান্দায়

বালুচরী বহু বর্ণময় ।

গান শেষ তবু তখনো তার

প্রতিধ্বনিরা দশ দিকে।

যেন শুধু তুমি তোমারই সব

মূর্তিতে ঠাসা মিউজিয়াম

ট্রামলাইনের ,ছাইগাদার

গর্তে গভীর কলকাতায় ।

কী করে এমন পারো তুমি

নন্দিনী ?

–সহজ ম্যাজিক । শিখবে কি ?

রুমালটা দাও,ঘন গিঁটে

চোখ দুটো বাঁধি। তারপরে

যাদু কাঠিটাকে ছুঁইয়ে দিই ,

কাছে এসো।

–অত বোকা নই নন্দিনী !

খানিকটা জানি ,পুরুষকে

কী করে বানাও পোষা পাখি ।

ঝর্না দেখাবে, কখনো তার

উৎসের চাবি খুলবে না ।

বিছানা পাতবে মখমলের

কিন্তু বসতে দেবে চেয়ার ।

সাজানো দোকানে থাককে থাক্

উর্বরতার বীজ ও সার

অথচ দুবেলা বন্ধ ঝাঁপ।

জলের যা খেলা ,ভাসিয়ে সুখ

গাছ ডুব দিয়ে মরে মরুক

জলের কী ?

–মিথ্যে ! মিথ্যে ! শুভঙ্কর !

তোমারই ভুলে গাছকে মেঘ

বানিয়ে চেয়েছো বৃষ্টিজল ।

যে-মোমবাতির ক্ষণজীবন

তারই কাছে এসে কেবলই চাও

এমন আলো যা অস্তহীন ।

তোমরা বুনছো কল্পনায়

আমরা যা নই তারই ছাঁদে

সোনালী সুতোর লম্বা লেস।

–নন্দিনী ! হায় এইটুকু

যথেচ্ছোচার আছে বলেই

এই মরা-হাজা পৃথিবীটার

মৃত্যু চাইনি এখনো কেউ ।

নইলে তো কবে কড়িকাঠে

ঝুলিয়ে দিতাম ।এবং এর

কৃতিত্বটুকু সবই তোমার ।

তুমি মানে নারী ,যার ছোঁয়ায়

ঘুঁটে পুড়ে হয় গন্ধ ধুপ ।

–চুপ করো তুমি, চুপ করো

আজকাল বড় বাচালতায়

পেয়েছে তোমাকে।

–এটাও তো মজা।যতক্ষণ

তুমি পাশে থাকো,আমি নদী

নৌকোর পাল ঝোড়ো হাওয়া ।

তুমি চলে গেলে আমি পাহাড়

তাও নয়,যেন ইঁট বা কাঠ

কাঠের টেবিল ,বইয়ের রাক্।

এত বোবা থাকি,লোকে ভাবে

মরে গেছি বুঝি অনেকদিন ।

একটু আগে যে বললে না

সোনালী সুতোর লম্বা লেস্

আসলে তখন সেইটাকেই

বুনি, যাতে লোকে দেখতে পায়

যে-যার বুকের সঙ্গোপন

উপনিবেশ ।।