লাল বাতির নিষেধ ছিল না,
তবুও ঝড়ের-বেগে-ধাবমান কলকাতা শহর
অতর্কিতে থেমে গেল ;
ভয়ঙ্করভাবে টাল সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল
ট্যাকসি ও প্রাইভেট, টেম্পো,বাঘমার্কা ডবলডেকার ।
‘গেল গেল ‘ আর্তনাদে রাস্তার দু’দিক থেকে যারা
ছুটে এসেছিল–
ঝাঁকামুটে, ফিরিওয়ালা, দোকানি ও খরিদ্দার—
এখন তারাও যেন স্থির চিত্রটির মতো শিল্পীর ইজেলে
লগ্ন হয়ে আছে ।
স্তব্ধ হয়ে সবাই দেখছে,
টালমাটাল পায়ে
রাস্তার এক-পার থেকে অন্য-পারে হেঁটে চলে যায়
সম্পূর্ণ উলঙ্গ একটি শিশু ।
খানিক আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে চৌরঙ্গিপাড়ায় ।
এখন রোদ্দুর ফের অতিদীর্ঘ বল্লমের মতো
মেঘের হৃৎপিন্ড ফুঁড়ে
নেমে আসছে ;
মায়াবী আলোয় ভাসছে কলকাতা শহর ।
স্টেটবাসের জানালায় মুখ রেখে
একবার আকাশ দেখি, একবার তোমাকে ।
ভিখারি-মায়ের শিশু ,
কলকাতার যিশু,
সমস্ত ট্রাফিক তুমি মন্ত্রবলে থামিয়ে দিয়েছ ।
জনতার আর্তনাদ, অসহিষ্ণু ড্রাইভারের দাঁতের ঘষটানি,
কিছুতে ভ্রুক্ষেপ নেই ;
দু’দিকে উদ্যত মৃত্যু, তুমি তার মাঝখান দিয়ে
টলতে টলতে হেঁটে যাও ।
যেন মূর্ত মানবতা, সদ্য হাঁটতে শেখার আনন্দে
সমগ্র বিশ্বকে তুমি পেতে চাও
হাতের মুঠোয় । যেন তাই
টালমাটাল পায়ে তুমি
পৃথিবীর এক-কিনার থেকে অন্য-কিনারে চলেছ ।।
২৬ ভাদ্র , ১৩৭৬