এক
সাঁওতাল মেয়েদের গান—
পাহাড়িয়া মধুপুর,মেঠো ধূলিপথ
দিনশেষে বৈকালী মিষ্টি শপথ :
‘মোহনিয়া বন্ধু রে,আমি বালিকা
তোরই লাগি গান গাই, গাঁথি মালিকা।
আজো সন্ধ্যার শেষে খালি বিছানা;
আমি শোবো ,পাশে মোর কেউ শোবে না–
তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না।’—
সুরে সুরে হাওয়া তার মিষ্টি বুলায়;
সাঁওতাল মেয়ে -ক’টি দৃষ্টি ভুলায়।
দিন শেষ–ধূ ধূ মাঠ,ধূ ধূ মেঠো পথ–
সাঁওতাল মেয়ে-ক’টি ছড়ালো শপথ–
হাওয়ায় হাওয়ার মতো তাদের শপথ।
দুই
[ধীরে মাদল ]
আয় মিতেনী,আজ রাতে
চাঁদকুড়ানো মাঝ রাতে
আবছা আলোর কান্নাতে
মুখ রেখে তুই ঝরনা-ধারে আয়।
আয় জোয়ানের মন-জ্বালা
নাচ দিয়ে সই গাঁথ মালা–
চুমুর গেলাস মদ ঢালা
দে ছুঁড়ে দে তিন পাহাড়ের গায়।
[জোরে মাদল]
আহা মাদল,মাতাল মাদল বাজছে তোরই জন্যে লো।
খুশির হাওয়া,পাগলা হাওয়া গান দিলো রাজকন্যে লো !
আয়,কাছে আয় ,মন দে লো !
তিন
চোখ কেন তোর কাঁপছে মেয়ে
বুক কেন তোর দুলছে ?
গাল দু’খানি লালচে,শরীর
সাপের মতোই ফুলছে ?
কাকে মারবি ছোবল, লো,
কোন্ ছেলে তোর কী করলো ?
মাদল ভেবে কেউ কি তোকে
আজকে বাজালো?
ফুল দিয়ে নয়,ফাগ ছড়িয়ে
বিকেল সাজালো ?
কেমন দিবি সাজা রে ,
আর যাবিনে পাহাড়ে ?
চার
এত গান আকাশে
এত গান বাতাসে !
সাঁওতাল মেয়েটির টিপ কপালে
ছেলেটি পেছন তবু নিলো কী -ব’লে ?
রাঙা ফুল মেয়েটির খোঁপায় জ্বলে
ছেলেটি বাজালো বাঁশি তবু কী -ব’লে ?
এত মদ আকাশে
এত মদ বাতাসে !
নেশা যেন ধ’রে যায় ছেলেটির বাঁশিতে
মনে হয় দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে,
তবে চাঁদ স’রে যাও,যাও তা হ’লে—
‘ও ছেলে ,পেছন তুই নিলি কী-বলে?
‘পথ ভুলে গেছি মেয়ে খিল্খিল্ হাসিতে;
শোন্, কোনো দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে।’
এত আলো আকাশে
এত আলো বাতাসে !