গোধূলির সাঁওতাল // তিন পাহাড়ের স্বপ্ন // বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

এক

সাঁওতাল মেয়েদের গান—

পাহাড়িয়া মধুপুর,মেঠো ধূলিপথ

দিনশেষে বৈকালী মিষ্টি শপথ :

‘মোহনিয়া বন্ধু রে,আমি বালিকা

তোরই লাগি গান গাই, গাঁথি মালিকা।

আজো সন্ধ্যার শেষে খালি বিছানা;

আমি শোবো ,পাশে মোর কেউ শোবে না–

তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না।’—

সুরে সুরে হাওয়া তার মিষ্টি বুলায়;

সাঁওতাল মেয়ে -ক’টি দৃষ্টি ভুলায়।

দিন শেষ–ধূ ধূ মাঠ,ধূ ধূ মেঠো পথ–

সাঁওতাল মেয়ে-ক’টি ছড়ালো শপথ–

হাওয়ায় হাওয়ার মতো তাদের শপথ।

দুই

[ধীরে মাদল ]

আয় মিতেনী,আজ রাতে

চাঁদকুড়ানো মাঝ রাতে

আবছা আলোর কান্নাতে

মুখ রেখে তুই ঝরনা-ধারে আয়।

আয় জোয়ানের মন-জ্বালা

নাচ দিয়ে সই গাঁথ মালা–

চুমুর গেলাস মদ ঢালা

দে ছুঁড়ে দে তিন পাহাড়ের গায়।

[জোরে মাদল]

আহা মাদল,মাতাল মাদল বাজছে তোরই জন্যে লো।

খুশির হাওয়া,পাগলা হাওয়া গান দিলো রাজকন্যে লো !

আয়,কাছে আয় ,মন দে লো !

তিন

চোখ কেন তোর কাঁপছে মেয়ে

বুক কেন তোর দুলছে ?

গাল দু’খানি লালচে,শরীর

সাপের মতোই ফুলছে ?

কাকে মারবি ছোবল, লো,

কোন্ ছেলে তোর কী করলো ?

মাদল ভেবে কেউ কি তোকে

আজকে বাজালো?

ফুল দিয়ে নয়,ফাগ ছড়িয়ে

বিকেল সাজালো ?

কেমন দিবি সাজা রে ,

আর যাবিনে পাহাড়ে ?

চার

এত গান আকাশে

এত গান বাতাসে !

সাঁওতাল মেয়েটির টিপ কপালে

ছেলেটি পেছন তবু নিলো কী -ব’লে ?

রাঙা ফুল মেয়েটির খোঁপায় জ্বলে

ছেলেটি বাজালো বাঁশি তবু কী -ব’লে ?

এত মদ আকাশে

এত মদ বাতাসে !

নেশা যেন ধ’রে যায় ছেলেটির বাঁশিতে

মনে হয় দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে,

তবে চাঁদ স’রে যাও,যাও তা হ’লে—

‘ও ছেলে ,পেছন তুই নিলি কী-বলে?

‘পথ ভুলে গেছি মেয়ে খিল্খিল্ হাসিতে;

শোন্, কোনো দোষ নেই ভালোবাসা-বাসিতে।’

এত আলো আকাশে

এত আলো বাতাসে !