ঘোষনা-সুভাষ মুখোপাধ্যায় [ghoshona-subhas mukhopadhyay]

এ দেশ আমার গর্ব,

এ মাটি আমার কাছে সোনা ।

এখানে মুক্তির লক্ষ্যে হয় মুকুলিত

আমার সহস্র সাধ,সহস্র বাসনা।

এখানে আমার পাশে হিমাচল,কন্যাকুমারিকা।

অলঙ্ঘ্য প্রাচির ঐক্য প্রতিজ্ঞা পরিখা।।

দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ,

রক্তচক্ষু রাজার শাসন-

শকুনি বিশ্বস্ত বন্ধু,

মুঠোয় শিথিল সিংহাসন ;

সর্বাঙ্গে চিহ্নিত মৃত্যু

শবের গলিত গন্ধ ছোটে ।

প্রজাপুঞ্জ ওঠে ;

আগুন লেগেছে ঘরে ,

খরসূর্য মাথার উপরে ।

ভান্ডারে উধাও খাদ্য ,

শূন্য পেটে চাষবাস চুপ

কারখানায় পড়েছে কুলুপ।

দোকানে দ্বারস্ত অক্ষৌহিণী

পিছনে করুণমূর্তি পথের কাহিনী

গহন অরন্য আরাকান;

স্খলিত পায়ের ছন্দে

স্পন্দিত শ্মশান।

সর্বস্বান্ত চোখে পড়ে

বার বার হাতের শৃঙ্খল –

পলাতক প্রাণের সম্বল ।।

বিড়ম্বিত জীবনে আবার

কুরুক্ষেত্র করাঘাত করে

পালাবার নেই কোনো গোপন দুয়ার।

সম্মুখে প্রতীক্ষমাণ সবুজ প্রান্তরে

শায়িত বল্লম;

পায়ে পায়ে রুদ্ধগতি বিদ্যুৎ কদম,

ঘুম ভাঙে সম্মিলিত মুঠি ;

অগ্নিবর্ণ চোখের ভ্রুকুটি

মুহূর্তে হারায় দম্ভ ,

দর্প তার হয় কুটি কুটি।।

গঙ্গার জোয়ারে এসে লাগে

ভল্গার তীরের স্পর্শ

চোখে নব সূর্যোদয় জাগে

মুক্তি আজ বীরবাহু

শৃঙ্খল মেনেছে পরাভব;

দিগন্তে দিগন্তে দেখি

বিস্ফোরিত আসন্ন বিপ্লব।।

এখানে বিচিত্র স্রোত

মুক্তির একাগ্র লক্ষে আসে ;

আজকের তুরঙ্গ ইতিহাসে

দেশপ্রেম বল্গা ধরে ।

পদক্ষেপ কেবলি চঞ্চল ।

গ্রামে গঞ্জে শহরে বাজরে

দুর্জয় সংকল্প নেয় হাজারে হাজারে ।

মূত্যুকীর্ণ পথে হই জড়ো;

নতুন জন্মের ডঙ্কা বাজে,

বেদনায় পৃথ্বী থরো থরো ।।

এ দেশ আমার গর্ব

এ মাটি আমার চোখে সোনা ।

আমি করি তারি জন্মবৃত্তান্ত ঘোষণা।।