নাট্য-আলেখ্য : ‘ভাবনা’ // সংকলন-পিয়ালী দাস অধিকারী//শিশুদিবসে সকল শিশুদের উদ্দেশ্যে এই নাটকের সংকলন//

চরিত্রে –নীল রিমি বাপ্পা টুকুন লিপি টিও বিট্ট মিকো রিংকি সোনাই ওলি সজু ননাই

প্রথম দৃশ্য —[ক্লাবের সামনে 5জন (নীল রিমি টিও সোনাই সজু ) বসে গান করছে–”আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ”

[টুকুন লিপি ননাই প্রবেশ করে ]

টুকুন : [দূর থেকে] অ্যাই নীল ,বিকেল বেলা ক্লাবের সামনে বসে হঠাৎ তোদের এমন আনন্দ ,খুশি খুশি ভাব…..

লিপি : পুরানো দিনের কথা মনে পড়ছে ? কি রে ,কি ব্যাপার রে —আজকে কি ?

নীল : ওমা টুকুন-লিপি তোরা জানিস না আজকে কি ?

টিও : আজকে যে আমাদের পন্ডিত জহরলাল নেহেরুর জন্মদিন—শিশুদিবস । সারাদেশে আজ শিশুদিবস পালন হচ্ছে ।

সোনাই : হ্যাঁ আমাদের মত ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সবাই মিলে আবৃত্তি করছে ,গান করছে,নাচ করছে , উঃ কি আনন্দ !

রিমি :কেন ননাই তোদের মনে নেই এই তারিখটার কথা ?

সজু :আমরা সবাই মিলে গত বছর কি মজাই না করেছিলাম ।

টুকুন লিপি ননাই –[একসাথে ] : হ্যাঁ হ্যাঁ রিমি ,সজু মনে পড়েছে ।

সোনাই : এই নীল – টিও চল না এবারও আমরা সবাই মিলে শিশু-উৎসব করি । নাচ-গান -কবিতা একটু খাওয়া-দাওয়া আনন্দ করি ।

বাকি সবাই একসাথে : হ্যাঁ হ্যাঁ চল চল ।

ননাই : এখনই চল্ ওলি,রিংকি,মিকো ,বিট্ট বাপ্পা ওদের সবাইকে ডেকে শুরু করে দিই ।

নীল : অ্যাই টুকুন – সোনাই -সজু তোরা তিনজন ওদের সবাইকে ডেকে নিয়ে আয় । আর রিমি-লিপি -টিও ননাই চল আমরা স্টেজ তৈরী করি । [তিনজন চলে যায়]

ননাই : সেরকম কিছু দরকার নেই,স্টেজ তো আমাদের আছেই শুধু তার ওপর বড় একটা শতরঞ্চি পেতে দিলেই হবে ।

[সবাই মিলে হাত লাগায় শতরঞ্চি পাতে,—স্টেজ তৈরি করতে করতে লিপি বলে ওঠে…অর্ধেক পাতা হবে ]

লিপি : কিন্তু Music ,আলোর ব্যবস্থা কি করে হবে ? এই অন্ধকারে….

টিও :হ্যাঁ ঠিক বলেছিস ,একদম ভুলে গেছিলাম রে । এই লিপি-ননাই চল আমরা তিনজন যাই । সৌরভকাকু আর Lightman কে বলে পুরো টিম নিয়ে চলে আসি ।

লিপি : তাই চল…..[লিপি,টিও ননাই চলে যায় ]

রিমি : অ্যাই মিষ্টি-দাদুকেও খবর দিস ।

[স্টেজ সাজান চলছে , নিজেরা কথা বলছে ]

নীল : ওরা এত দেরি করছে কেন রে ?অন্ধকার হয়ে এল, কখন অনুষ্টান শুরু করব ?[শতরঞ্চি পেতে বসে বসে স্টেজে বলছে ]

রিমি : অ্যাই নীল বল্ তো কোন প্রাণী অন্ধকারে ভালো দেখতে পায় ?

নীল : না না বল না , কোন প্রাণী অন্ধকারে ভালো দেখতে পায় ।

নীল : তাই তো মানে….

রিমি :হ্যাঁ বল বল ,কি হল বলতে পারছিস না ?

নীল :না মানে…

রিমি :ভাব একটু,কী পারছিস না ? প্যাঁচা ! প্যাঁচা অন্ধকারে ভালো দেখতে পায় ।যাঃ তুই না কিচ্ছু জানিস না । আচ্ছা, এটা পারলি না তো,এবার একটা ধাঁধা তোকে

জিজ্ঞেস করছি । বল তো কোন জাহাজ জলে ভাসে না ?

নীল : এ আবার একটা ধাঁধা নাকি ? সব জাহাজই তো ভেসে বেড়ায় জানি ।

রিমি : হুঁ হুঁ চিন্তা কর ,খুব সহজ উত্তর…কোন জাহাজ জলে ভাসে না । [খিলখিল হাসি ] তুই যে কি,মোটেই মাথা ঘামাতে চাস না ।ভাব না ,খুব সহজ।

নীল :বলছিস? কোন জাহাজ জলে ভাসে না? না ঠিক বুঝতে পারছি না !

রিমি:পারলি না তো? ঠিক ? উড়োজাহাজ…উড়োজাহাজ জলে ভাসে না । [খিলখিল হাসি]

নীল :এই রিমি,তুই এবার ধাঁধা-টাদা রাখত।আমি আর তোর এসবের উত্তর দিতে পারছি না ।বরং তুই তো ভালো আবৃত্তি করতে পারিস ,একটা শোনা দেখি,ওরা ততোক্ষনে এসে যাবে ।

রিমি : বলছিস্ তাহলে তাই শোন- কি করি …কি করি …হুঁ শঙ্খঘোসের –”মিস” [কবিতাটা বলে–”বাইরে এত লম্ফঝম্ফ ক্লাসে গেলেই চুপ” ]

দ্বিতীয় অধ্যায় ::

[সবাই ভেতরে প্রবেশ করে,টুকুন,সোনাই,মিকো, বাপ্পা, বিট্ট, রিংকি .ওলি ] [বিট্ট আগে থাকে] [একটু পরে পিছন পিছন লিপি,টিও, পুরো Music-Light টিমটা নিয়ে আসে ।]

বিট্ট : এই রিমি কি হরহর করে কার কবিতা বলছিস রে ?

রিমি : শঙ্খঘোসের–নাম শুনিস নি মনে হচ্ছে কোন দিন ? ও–বিট্ট তোরা সবাই এসে গেছিস ?

বিট্ট :হ্যাঁ ওসব কবিতা এখন বাদ দে,চল সবাই হাত লাগাই তাড়াতাড়ি,প্রোগ্রাম শুরু করে দিই । সৌরভকাকু তোমরা স্টেজের পাশে চেয়ার পাতা আছে ,ওখানে বসো। ওখান থেকে Music টা বাজাবে । [সবাই মিলে হাত লাগায় ,চেয়ার পাতে ,Music বাজে —এর মধ্যে টিও একটা গান ধরে ]

টিও:” চারদিকে যা ঘটছে দাদা,পাচ্ছে বেদম হাসি/ সেই আনন্দে T.V ‘র পর্দায় মুখ দেখাতে আসি—“

মিকো : কি রে তুই আবার কি গান ধরলি ?আচ্ছা আচ্ছা কর ,গানটা খুব ভালো লাগে।

টিও:বাপ্পা ,তুইও আমার সাথে গলা মেলা।

বাপ্পা : ঠিক আছে চল একসাথে গাই।[দুজনে গান ধরে] [ Music হাল্কা বাজে,সবাই স্টেজ ও চেয়ারে বসে গুন গুন করে গাইতে থাকে।]

রিংকি: হ্যাঁ রে টিও খুব T.V দেখিস না। চুণি-পান্নার Title Song টা তো বেশ ভালোই রপ্ত করেছিস দেখছি।

টিও: কি আর করি বল,রবীন্দ্র-নজরুল কিছু তো আর শিখতে পারছি না,সারাদিন শুধু পড়া-পড়া আর পড়া। মা বলেন, একটু আধটু গানের চর্চা কর টিও ,আজকাল শুধু পড়াশুনা করলেই হয় না,সব দিকেই চোস্ত হতে হয়। আর বাবার তো সাব্ জবাব–‘এখন গান-বাজনা করার দরকার নেই ,শুধু পড়াশুনা কর।’তাই কি আর করি বল,লুকিয়ে লুকিয়ে T.V থেকে এই গানটা তুলেছি।

রিংকি: আমার বাড়িতে তো T.V দেখা একেবারে নিষিদ্ধ। Sony তে একটু Dance প্রোগ্রামটা দেখব তো মা কিছুতেই চালাতে দেবে না । নিজে সারাদিন শুধু বেনুদির রান্নাঘর আর ঐ সোনাবৌঠান দেখছে ।

লিপি :না রে রিংকি,তুই তবুও ভালো আছিস।সারাদিন অন্ততঃমাকে কাছে পাস।আমি তো সারাদিন ঐ বুলুদিদির কাছে থাকি। সকালে মা কলেজে চলে যায়–বাবা office। মা ফেরে সেই সন্ধেবেলা।একটুও ভালো লাগে না রে।স্কুল থেকে এসে তোদের মতো আমারও জানিস মায়ের মুখটা দেখতে ইচ্ছে করে।কিন্তু….[চোখ জ্বলে ভরে যায়।]

মিকো:দুঃখ করিস না লিপি,তোর মত আমার বাবা-মা ও তো চাকরি করে ,তাতে কি হয়েছে? আমি কি তোর মত মন খারাপ করে বসে থাকি ? আমি বাবা না আসা পর্যন্ত চুটিয়ে V.D.O Game খেলি।দারুন interesting রে—-Galaxy টা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ।

বাপ্পা:হাঁ হাঁ …আমিও chance পেলেই মা -বাবা না থাকলে কার্টুন দেখতে বসে যাই। ও! ফাটাফাটি লাগে…হাঁ হাঁ হাঁ …

বিট্ট: আমার মা-বাবা অবশ্য সব কিছুই করতে বলে । তবে– পড়াশুনা নিয়ে এত বকাবকি করে না,তাই মাঝে মাঝে মনে হয় —

টিও:আমার কি মনে হয় জানিস ? গুপী-বাঘার মত যদি ভুতের রাজার কাছ থেকে তিনটে বর পেতাম তাহলে—

টুকুন: তাহলে কি বাবা-মাকে ,মানে যারা তোকে ব’কে তাদের কি হাল্লারাজার দেশে নিয়ে যেতিস ? নাকি—

টিও:না না তা করব কেন ? আমি ভূতের রাজার কাছে বলবো-রাজামশাই আমরা না ছোটরা খুব দুঃখী। স্কুলের সিলেবাস এত বড় না, যে সারাদিন পড়ে পড়েও শেষ করতে পারি না ।তার উপর আবার মায়ের First হওয়ার আবদার ।আপনি যদি আমাদের সিলেবাসটা একটু ছোট করে দেন তবে আমরা সবাই খুব খুশী হবো।

বাপ্পা:দ্বিতীয় বরটা আমি চাইব।বলবো রাজামশাই আমাকে আপনি দুটো ডানা দিন,আমি মাঝে মাঝে সেই ডানা মেলে উড়তে উড়তে পৃথিবী থেকে অন্য গ্রহে চলে যাব,যেখানে কোনো ধোঁয়া নেই ,রাস্তায় বেরোলে ধুলো চোখে পড়ে না, চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ গাছ।তাহলে আমার আর শ্বাসকষ্টও হবে না,চোখে দিয়ে জলও পরবে না। আর বাবা-মাকেও এই Tention থেকে মুক্ত করা যাবে।

রিংকি: সে রকম কোনো গ্রহই নেই। পৃথিবীছাড়া আর কোথাও সবুজ পাবি না।

ননাই:শুনেছি চাঁদে নাকি শুধু মাটি আছে।,কোন গাছপালা নেই।আমরা যদি সেখানে গিয়ে নতুন করে চারাগাছ লাগাই,নতুন প্রানের সৃষ্টি করি—

সজু: হ্যাঁ ঠিক বলেছিস ননাই ,তাহলেই তো আমরা চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ দেখতে পাব। নতুন করে একটা সবুজ চাঁদ-পৃথিবী তৈরি হবে।

মিকো:আর সেই চাঁদ-পৃথিবীটা হবে আমাদের ছোটদের পৃথিবী। সেখানে কোন Selfish Giant থাকবে না।

রিমি:সব তো বুঝলাম কিন্তু ঐ চাঁদের দেশে তোরা যাবি কি করে ?

সজু: কেন ঐ ভুতের রাজার দেওয়া ডানা মেলে?

ননাই: নয়তো—”এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব। [দুজনে মিলে গান ধরে-সজু গলা মেলায়]

রিমি: এই ফাঁকে আমি তোদের একটা ধাঁধা জিগ্যেস করি —বল তো কোন দেশে মাটি নেই…

বিট্ট: উঃ রিমি তোর মাথায় শুধু ধাঁধাই ঘোরে না রে ? এইবার তৃতীয় বরটা কিন্তু আমি চাইব। বলবো রাজামশাই, আমাদের এখানে তুমি শুধু ছোটদের জন্য একটা ক্লাব করে দাও। যেখানে থাকবে সুইমিংপুল,টেবিলটেনিস,বিলির্য়াড,চেস, ব্যাডমিন্টন খেলার কোট,আর একটা ই—য়াব্ বড় Flat-Screen এর T.V।যেখান আমরা শুধু ছোটরা মজা করে সবাই মিলে কার্টুন দেখব।

ওলি: এর পরের বরটা কি রিমি বলবি ?

সোনাই: না না আর কোন বর-টর চাস না। এসব কথা শুনে ভূতের রাজা যদি বর না দেয়। যদি বলে, তোরা বাবা মায়ের নামে নিন্দে করছিস ?

ওলি: হ্যাঁ রাজামশাই তখন বলবেন—-“তোরা বাঁকা কথা কেন কস – কেন কস-কেন কস—/আমি মনে বড় ব্যাথা পাই-ব্যাথা পাই-ব্যাথা পাই—–“

নীল :যাক্ এসব কথা। এবার আসল প্রোগ্রাম শুরু করা যাক্ । এই ওলি তুই তো ভালো কথা বলতে পারিস ,তুই-ই পুরো অনুষ্ঠানটা পরিচালনা কর। আমরা রবীন্দ্র-নজরুল-সুকুমার-সতেন্দ্র সব মিলিয়ে মিশে যে যা পারব তাই করব। [প্রোগ্রাম শুরু হয় ,হাল্কা Music বাজতে থাকে ]

ওলি : আজ 14ই নভেম্বর শিশুদিবস।প্রত্যেকবারের মত আমরা এবারেও কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করব নিজেদের মত করে।

[নাম ঘোষনা]

বর্ষা ঋতু কেটে গেছে কিন্তু বাস্তবে বর্ষা সবে গেল। তাই আমরা আমাদের আজকের অনুষ্ঠান শুরু করছি রবিঠাকুরের “মেঘমুক্ত” কবিতাটা দিয়ে। [“ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে আয় গো আয় “

এবার শরতের আগমন ঘটেছে,[ গান-নাচ>গান করে–রিংকি,নীল,বাপ্পা,রিনি,সজু,ওলি / নাচ করে–টুকুন,লিপি,সোনাই]

ওলি ও বাপ্পা –কবিতা বলে একসাথে [জৈষ্ঠী মধু–সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত “আহা, ঠুকরিয়ে মধু কুলকুলি “

গান –“হিমের রাতে ঐ গগনের “[একক গান রিংকির/ একক নাচ -টুকুনের]

আবৃত্তি–বিট্ট: “ঘুম জাগানো পাখি -কাজি নজরুল ঈসলাম “

সমবেত নাচ: “শীতের হাওয়ায় লাগলো নাচন”

আবৃত্তি: মিকো “আমার কথা —প্রমোদ বসু”

সমবেত গান আবৃত্তি নাচ>” বসন্তে ফুল গাঁথলো– “

Music change

তৃতীয় দৃশ্য:

রিনি: নে নে অনেক নাচ গান হল, এবার একটু খাওয়া-দাওয়া করা যাক।

টিও:তাহলে আমরা নবনীতা দেবসেনের “ডিনারে” কবিতাটা চট্ করে পাঠ করে দিই।

টিও ও ননাই: আবৃত্তি “নাম কি তোমার?–রাজা রে ” [মিষ্টি দাদুর মিষ্টি নিয়ে প্রবেশ ]

সবাই মিলে : এই মিষ্টিদাদু এসে গেছে রে ।সবাই খাওয়া-দাওয়া কর। [মিষ্টিদাদু সবাইকে লাড্ডু দেয় ]

সমেত কবিতা: ” খাই খাই –সুকুমার রায়”

ওলি:এবার আমাদের আনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হবে -এই গানটি দিয়ে–[সবাই একসাথে গান করে> “আমাদের ভালো কর হে ভগবান “

[সবাই মিলে নমষ্কার করে—নমষ্কার [রিমি বাদে]

রিমি:আরে আরে নমস্কার করছিস কি। এখনও তো অনুষ্টান শেষ হয়নি । আগে আমার একটা ধাঁধার উত্তর দিয়ে যা,তবে তো শেষ ? এই তোরা সবাই শোন,আপনারাও সবাই শুনুন। [Audience কে উদ্দেশ্য করে ]—-বলুন তো কোন বরে শিশুরা সবচেয়ে বেশি খুশি থাকে ? হাঁ হাঁ –কি পারলেন না তো? তবে তোলা থাক আগামি বছরের জন্য ।।

// নমস্কার // পর্দা নামে