বানভাসি//দেবব্রত সিংহ (আঞ্চলিক কবিতা )

আমি বানভাসি লোক বঠি গ

নামটা হল্য মতি সদ্দার

বাপ কাকার আমল থাকে চৌকিদারি করি

পঞ্চাশ সালের আকালের পর থাকে গেল বছর তক

খরার চোটে দকড়কঁচা হয়্যে ছিলম

ই বছর আবার বানভাসি,

কাগজআওলাদের বললম ‘বাবু লেখে লিবেন,আমার কথা ‘ট’

কিন্তুক গাঁয়ের লোক কাগজবাবুকে ভাঁওরাই দিলেক

নাহালে লেখা ক্যানে ।

কাগজআওলা ফটক তুলা কল তক তাক করেছিল

লোকে বললেক ,

‘উয়ার কথা লিয়ে আপনার কিছু হবেক নাই

উ বুড়া পাগল বঠে

পাগলে কী না বলে’

ই বাস্যা ! আমি পাগল হলম কীসে

কই আমি ত পাগল লই

ভাল কইর্্যা ভালে দ্যাখুন

কিন্তুক উয়ারা বললেক ‘বুড়া গয়েরম্যানের লিরিফের লোট ছিঁড়ে

লদীর জলে ভাসাই দিইছে’

জোরহাত কইর্্যা বলি ‘আঁইজ্ঞা উয়াদে কথা ধরবেন নাই

হেই দ্যাখুন আমি মতি সদ্দার ঠিকই আছি

আমার বউ বিটি দামুদরের বানের জলে ভাস্যে গেলেও

বুড়ি মা’টা বিটি ঘর যাইয়ে তরাই ছিল

কিন্তুক শেষতক সেও গেছে,

বাবুরা বললেক ‘করেলা’

গয়েরম্যানের লোক বললেক ,’না পেটের রোগ বঠে’

এই কইর্্য হেঁচড়া হেঁচড়ি টানাটানি করতেই

বুড়ি হাঁসপাতালের মাঝপথে মইরে গেল,

আর আমি —-

আমি আখন রাতেরবেলায় চৌকিদারির হাঁক দি

ধসা মাটির দিয়ালে দিয়ালে

বাবুদে দালান বাড়ির ধারে ধারে

তবে কি জানেন

গাঁয়ের লোক আখন রেই রেই কইরে আসবেক

পাগলটাকে গাঁয়ের থাকে খেদাড়তে হবেক

কিন্তুক যখন সিদিন রানিগঞ্জের বাজারে গেছলম

আর সন্ধাবেলায় হুস কইরে দামুদরের জল সিমাই গেলেক

কই তখেন আমার বউ বিটিকে সামলাই দিতে লারেছ

নাহালে আমরা বাগদিই বঠি

তবু অ্যাকঘর বাগদিই ত এই ছুটু গাঁ টাকে রাখ্যে ছিল

আজ এই কথা ট আমাকে কাগজআওলার কাছে

বলতে না দিয়ে পাগল সাজাইছ।

কিন্তুক আমি পাগল লই

শুনেন আপনারা শুনেন বাবুরা

আমি পাগল লই

আমি মতি সদ্দার

চৌকিদারের কাজ করবেক চিরক্কাল

চোরকে হাঁকরানই আমার কম্মঅ

তখেন নাহলে সিঁধাল চোরকে হাঁকরাথম

আর আখন

আখন ওই যে চোরটা হিড়ধারের ক্ষেতের পাশে লকলক কইরে বইছে

যে আমার বউ বিটিকে লিয়ে গেল চুরি করে

আখন আমি সেই চোরকে লিয়ে রোজদিন রাতের বেলায়

সবাইকে হাঁকরাই সামলাই দিব।

বলুন ইয়াতে আমি পাগল হলম কীসে

তুমরা আমার বউ বিটিকে সামলাতে লারেছ বলে

আমি মতি সদ্দার ক্যানে পারব নাই ।

আমি ত চৌকিদার বঠি

তাই সবাইকে রাতের বেলায় সামলাই দিব

হে-ই -দা-মু -দ -র -সি -মা -ই -ছে

পা -লা -ই -যা -ও

পা -লা -ই -যা -ও

দা -মু -দ -র -সি -মা -ই -ছে।।