মিছিলের মুখ // সুভাষ মুখোপাধ্যায়

মিছিলে দেখেছিলাম একটি মুখ,

মুষ্টিবদ্ধ একটি শাণিত হাত

আকাশের দিকে নিক্ষিপ্ত ;

বিস্রস্ত কয়েকটি কেশাগ্র

আগুনের শিখার মতো হাওয়ায় কম্পমান ।

ময়দানে মিশে গেলেও

ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ জনসমুদ্রের ফেনিল চূড়ায়

ফসফরাসের মতো জ্বলজ্বল করতে থাকল

মিছিলের সেই মুখ ।

সভা ভেঙে গেল, ছত্রাকারে ছড়িয়ে পড়ল ভিড়

আর মাটির দিকে নামানো হাতের অরণ্যে

পায়ে পায়ে হারিয়ে গেল

মিছিলের সেই মুখ ।

আজও দুবেলা পথে ঘুরি

ভিড় দেখলে দাঁড়াই

যদি কোথাও খুঁজে পাই মিছিলের সেই মুখ ।

কারো বাঁশির মতো নাক ভালো লাগে,

কারো হরিণের মতো চাহনি নেশা ধরায়–

কিন্তু হাত তাদের নামানো মাটির দিকে,

ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সমুদ্রে জ্বলে ওঠে না তাদের দৃপ্ত মুখ

ফসফরাসের মতো ।

আমাকে উজ্জীবিত করে সমুদ্রের একটি স্বপ্ন

মিছিলের একটি মুখ ।

অন্য সব মুখ যখন দুর্মূল্য প্রসাধনের প্রতিযোগিতায়

কুৎসিত বিকৃতিকে চাপার চেষ্টা করে,

পচা শবের দুর্গন্ধ ঢাকার জন্যে

গায়ে সুগন্ধি ঢালে,

তখন অপ্রতিদ্বন্দী সেই মুখ

নিষ্কোষিত তরবারির মতো

জেগে উঠে আমাকে জাগায় ।

অন্ধকারে হাতে হাতে তাই গুঁজে দিই আমি

নিষিদ্ধ এক ইস্তাহার,

জরাজীর্ন ইমারতের ভিৎ ধসিয়ে দিতে ডাক দিই

যাতে উদ্বেলিত মিছিলে একটি মুখ দেহ পায়

আর সমস্ত পৃথিবীর শৃঙ্খলমুক্ত ভালোবাসা

দুটি হৃদয়ের সেতুপথে

পারাপার করতে পারে ।।