সর্বহারা-কাজী নজরুল ইসলাম [Sarbohara-Kazi Nazrul Islam ]


ব্যথার সাঁতার-পানি-ঘেরা
চোরাবালির চর,
ওরে পাগল! ‌ কে বেঁধেছিস্
সেই চরে তোর ঘর?
শূন্যে তড়িৎ দেয় ইশারা
হাট তুলে দে সর্বহারা
মেঘ জননীর অশ্রুধারা
ঝরছে মাথার’ পর,
দাঁড়িয়ে দূরে ডাকছে মাটি
দুলিয়ে তরু-কর।।

কন্যারা তোর বন্যাধারায়
কাঁদছে উতরোল,
ডাক দিয়েছে তাদের আজি
সাগর-মায়ের কোল!
নায়ের মাঝি ! নায়ের মাঝি !
পাল তু’লে তুই দে রে আজি।
তুরঙ্গ ঐ তুফান- তাজী
তরঙ্গে খায় দোল।
নায়ের মাঝি ! ‌আর কেন ভাই ?
মায়ার নোঙর তোল।

ভাঙন- ভরা আঙনে তোর
‌ যায় রে বেলা যায়।
মাঝি রে! দেখ্ কুরঙ্গী তোর
কূলের পানে চায় ।
যায় চ’লে ঐ সাথের সাথী,
ঘনায় গহন শাঙন রাতি,
মাদুর-ভরা কাঁদন পাতি
ঘুমুস নে আর হায়!
ঐ কাঁদনের বাঁধন ছেঁড়া
এতই কি রে দায়?

হীরা মানিক চাস্ নিক’ তুই,
চাস নি তো সাত ক্রোড়,
একটি ক্ষুদ্র মৃৎপাত্র—
ভরা অভাব তোর,
চাইলি রে ঘুম শ্রান্তিহরা
একটি ছিন্ন মাদুর ভরা,
একটি প্রদীপ- আলো- করা
একটু কুটীর -দোর!
আসলো মৃত্যু আসলো জরা,
আসলো সিঁদেল-চোর !

মাঝিরে তোর নাও ভাসিয়ে
মাটির বুকে চল্
শক্ত মাটির ঘায়ে হউক
রক্ত পদতল।
প্রলয় -পথিক চলবি ফিরি
দ’লবি পাহাড় কানন গিরি!
হাঁকছে বাদল, ঘিরি ঘিরি,
নাচছে সিন্ধুজল।
চল্ রে জলের যাত্রী এবার
মাটির বুকে চল্ ।।
( লাঙ্গল অফিস, কলিকাতা ২৪শে চৈত্র–১৩৩২) ‌‌ (সর্বহারা)//