সুপ্রভাত-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [Suprabhat-Rabindra nath tthakur]

রুদ্র,তোমার দারুন দীপ্তি

এসেছে দুয়ার ভেদিয়া ;

বক্ষে বেজেছে বিদ্যুৎবাণ

স্বপ্নের জাল ছেদিয়া ।।

ভাবিতেছিলাম উঠি কি না উঠি,

অন্ধ তামস গেছে কিনা ছুটি,

রুদ্ধ নয়ন মেলি কি না মেলি

তন্দ্রাজড়িমা মাজিয়া ।

এমন সময়ে ,ঈশান,তোমার

বিষাণ উঠেছে বাজিয়া ।

বাজে রে গরজি বাজে রে,

দগ্ধ মেঘের রন্ধ্রে রন্ধ্রে

দীপ্ত গগনমাঝে রে ।

চমকি জাগিয়া পূর্বভুবন

রক্তবদন লাজে রে ।।

ভৈরব, তুমি কী বেশে এসেছ!

ললাটে ফুঁসিছে নাগিনী;

রুদ্রবীণায় এই কি বাজিল

সুপ্রভাতের রাগিণী ?

মুগ্ধ কোকিল কই ডাকে তালে ?

কই ফোটে ফুল বনের আড়ালে ?

বহুকাল পরে হঠাৎ যেন রে

অমানিশা গেল ফাটিয়া–

তোমার খড়্গ আঁধার-মহিষে

দুখানা করিল কাটিয়া

ব্যথায় ভুবন ভরিছে–

ঝর ঝর করি রক্ত-আলোক

গগনে গগনে ঝরিছে

কেহ-বা জাগিয়া উঠিছে কাঁপিয়া,

কেহ-বা স্বপনে ডরিছে ।।

তোমার শ্মশানকিঙ্করদল,

দীর্ঘ নিশায় ভুখারি।

শুষ্ক অধর লেহিয়া লেহিয়া

উঠিছে ফুখারি ফুকারি।

অতিথি তারা যে আমাদের ঘরে

করিছে নৃত্য প্রাঙ্গণ-‘পরে,

খোলো খোলো দ্বার ওগো গৃহস্থ,

থেকো না থেকো না লুকায়ে–

যার যাহা আছে আনো বহি আনো,

সব দিতে হবে চুকায়ে।

ঘুমায়ো না আর কেহ রে।

হৃদয়পিন্ড ছিন্ন করিয়া

ভান্ড ভরিয়া দেহো রে।

ওরে দীনপ্রান,কী মোহের লাগি

রেখেছিস মিছে স্নেহ রে।।

উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,

‘ভয় নাই ,ওরে ভয় নাই–

নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান

ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’

হে রুদ্র, তব সংগীত আমি

কেমনে গাহিব কহি দাও স্বামী–

মরণনৃত্যে ছন্দ মিলায়ে

হৃদয়ডমরু বাজাব;

ভীষণ দুঃখে ডালি ভরে লয়ে

তোমার অর্ঘ্য সাজাব।

এসেছে প্রভাত এসেছে!

তিমিরান্তক শিবশঙ্কর

কী অট্টহাস হেসেছে!

যে জাগিল তার চিত্ত আজিকে

ভীম আনন্দে ভেসেছে।।

জীবন সঁপিয়া,জীবনেশ্বর,

পেতে হবে তব পরিচয়;

তোমার ডঙ্কা হবে যে বাজাতে

সকল শঙ্কা করি জয়।

ভালোই হয়েছে ঝঞ্ঝার বায়ে

প্রলয়ের জটা পড়েছে ছড়ায়ে,

মেঘের সিংহবাহনে–

মিলনযজ্ঞে অগ্নি জ্বালাবে

বজ্রশিখার দাহনে।

তিমিররাত্রি পোহায়ে

মহাসম্পদ তোমারে লভিব

সব সম্পদ খোয়ায়ে–

মৃত্যুরে লব অমৃত করিয়া

তোমার চরণে ছোঁয়ায়ে।।