কলকাতার যিশু-নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

লাল বাতির নিষেধ ছিল না,

তবুও ঝড়ের-বেগে-ধাবমান কলকাতা শহর

অতর্কিতে থেমে গেল ;

ভয়ঙ্করভাবে টাল সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল

ট্যাকসি ও প্রাইভেট, টেম্পো,বাঘমার্কা ডবলডেকার ।

‘গেল গেল ‘ আর্তনাদে রাস্তার দু’দিক থেকে যারা

ছুটে এসেছিল–

ঝাঁকামুটে, ফিরিওয়ালা, দোকানি ও খরিদ্দার—

এখন তারাও যেন স্থির চিত্রটির মতো শিল্পীর ইজেলে

লগ্ন হয়ে আছে ।

স্তব্ধ হয়ে সবাই দেখছে,

টালমাটাল পায়ে

রাস্তার এক-পার থেকে অন্য-পারে হেঁটে চলে যায়

সম্পূর্ণ উলঙ্গ একটি শিশু ।

খানিক আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে চৌরঙ্গিপাড়ায় ।

এখন রোদ্দুর ফের অতিদীর্ঘ বল্লমের মতো

মেঘের হৃৎপিন্ড ফুঁড়ে

নেমে আসছে ;

মায়াবী আলোয় ভাসছে কলকাতা শহর ।

স্টেটবাসের জানালায় মুখ রেখে

একবার আকাশ দেখি, একবার তোমাকে ।

ভিখারি-মায়ের শিশু ,

কলকাতার যিশু,

সমস্ত ট্রাফিক তুমি মন্ত্রবলে থামিয়ে দিয়েছ ।

জনতার আর্তনাদ, অসহিষ্ণু ড্রাইভারের দাঁতের ঘষটানি,

কিছুতে ভ্রুক্ষেপ নেই ;

দু’দিকে উদ্যত মৃত্যু, তুমি তার মাঝখান দিয়ে

টলতে টলতে হেঁটে যাও ।

যেন মূর্ত মানবতা, সদ্য হাঁটতে শেখার আনন্দে

সমগ্র বিশ্বকে তুমি পেতে চাও

হাতের মুঠোয় । যেন তাই

টালমাটাল পায়ে তুমি

পৃথিবীর এক-কিনার থেকে অন্য-কিনারে চলেছ ।।

২৬ ভাদ্র , ১৩৭৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *