কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি-রবীন্দ্রসংগীত (বিচিত্র পর্যায়,অর্ধঝাপ তাল,স্বর-১৩ )

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক ।

মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ ।

ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের ‘পরে লোটে ।

কালো ? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।

ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই,

শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই ।

আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু ।

কালো ? তা সে যতই কালো হোক , দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।

পুবে বাতাস এলো হঠাৎ ধেয়ে, ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ ।

আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা , মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ ।

আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে আমি জানি আর জানে সেই মেয়ে ।

কালো ? তা সে যতই কালো হোক , দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।

এমনি করে কালো কাজল মেঘ জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান-কোণে ।

এমনি করে কালো কোমল ছায়া আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে ।

এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে ।

কালো ? তা সে যতই কালো হোক , দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।

কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি , আর যা বলে বলুক অন্য লোক ।

দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে , কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ ।

মাথার ‘পরে দেয়নি তুলে বাস , লজ্জা পাবার পায় নি অবকাশ ।

কালো ? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।।