দিনের আলো নিবে এল, সুয্যি ডোবে ডোবে । আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে– চাঁদের লোভে লোভে । মেঘের উপর মেঘ করেছে– রঙের উপর রঙ, মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা বাজল ঠঙ ঠঙ । ও পারেতে বিষ্টি এল, ঝাপসা গাছপালা । এ পারেতে মেঘের মাথায় একশো মানিক জ্বালা । বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে ছেলেবেলার গান– বিষ্টি পড়ে টাপুরর টুপুর, …
লাল বাতির নিষেধ ছিল না, তবুও ঝড়ের-বেগে-ধাবমান কলকাতা শহর অতর্কিতে থেমে গেল ; ভয়ঙ্করভাবে টাল সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ট্যাকসি ও প্রাইভেট, টেম্পো,বাঘমার্কা ডবলডেকার । ‘গেল গেল ‘ আর্তনাদে রাস্তার দু’দিক থেকে যারা ছুটে এসেছিল– ঝাঁকামুটে, ফিরিওয়ালা, দোকানি ও খরিদ্দার— এখন তারাও যেন স্থির চিত্রটির মতো শিল্পীর ইজেলে লগ্ন হয়ে আছে । স্তব্ধ হয়ে সবাই …
তুমি বলেছিলে,ক্ষমা নেই,ক্ষমা নেই । অথচ ক্ষমাই আছে । প্রসন্ন হাতে কে ঢালে জীবন শীতের শীর্ণ গাছে । অন্তরে তার কোনো ক্ষোভ জমা নেই । তুমি বলেছিলেে, তমিস্রা জয়ী হবে । তমিস্রা জয়ী হল না । দিনের দেবতা ছিন্ন করেছে অমারাত্রির ছলনা ; ভরেছে হৃদয় শিশিরের সৌরভে । তুমি বলেছিলে,বিচ্ছেদই শেষ কথা । শেষ কথা …
//বোধিসত্তাবদান-কল্পলতা // সন্ন্যাসী উপগুপ্ত মথুরাপুরীর প্রাচীরের তলে একদা ছিলেন সুপ্ত– নগরীর দীপ নিবেছে পবনে, দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে, নিশীথের তারা শ্রাবণগগনে ঘন মেঘে অবলুপ্ত । কাহার নূপুরশিঞ্জিত পদ সহসা বাজিল বক্ষে ! সন্ন্যাসীবর চমকি জাগিল, স্বপ্নজড়িমা পলকে ভাগিল, রূঢ় দীপের আলোক লাগিল ক্ষমাসুন্দর চক্ষে । নগরীর নটী চলে অভিসারে যৌবনমদে মত্তা । অঙ্গ আঁচল সুনীল …
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও । তারি রথ নিত্যই উধাও জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন, চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন । ওগো বন্ধু, সেই ধাবমান কাল জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেরি তার জাল- তুলে নিল দ্রুতরথে দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে তোমা হতে বহু দূরে । মনে হয়, অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়- রথের চঞ্চল বেগ …
নও তুমি বন্ধু—- হও শত্রু, অথবা চরম মিত্র, বন্ধুত্বের গরল আমারে দিও না, সে তুমি বিলাও অন্য কাহারে; সে গরল গলাদ্ধকরন আমার সাধ্যাতীত । ঘৃণা,উপেক্ষা,অপমান ঝরুক আমার প্রতি । সেই আমার শান্তি চরম প্রাপ্তি । যদি জন্মান্তর সত্য হয় তবে যুগান্তরও সত্য । যদি ধর্ম সত্য হয় তবে জাতিও সত্য । যদি রাজা সত্য হয় …
এখনও তোমার সেই ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাই ; এখনও তোমার সেই দারুণ বিলাপ কানে বাজে । গগনবিহারী চিল, খর দীপ্র দুুপুরবেলায় তুমি এক আকাশের থেকে অন্য আকাশের দিকে তেজস্বী ও স্বভাবত-সঙ্গীহিন সম্রাটের মতো সহজ উল্লাসে বাতাসে সাঁতার কেটে চলেছিল । যেতে যেতে, শূন্যের মেঘলা থেকে যে-রকম উল্কা খসে যায়, তুমিও সহসা সেই রকম ঊর্ধাকাশ …
”কাল থেকে ঠিক পাল্টে যাব দেখে রাখিস তোরা ,” বলতে-বলতে ঘুমিয়ে পড়ল অশ্বমেধের ঘোড়া পথের মধ্যিখানে ।। ভেবেছিলুম, যে দিকে যাই, জ্বালতে-জ্বালতে যাব শহর-গঞ্জ কারখানা-কল, কিন্তু এখন প্রাণে অন্যরকম ভুজুং দিচ্ছে অন্যরকম হাওয়া । ”এই নে , তোকে দিলুম বাড়ি, নতুন খড়ে ছাওয়া, দিলুম আগরতলার শীতলপাটি । কৃষ্ণা গাভীর দুগ্ধ দিলুম,বড্ডরকম মিঠে, এবং সোঁদরবনের মধু,চোদ্দো-আনা …
শুনেছি, রেলগাড়িতে জন্মেছিলাম দুই পায়ে তাই চাকা সারাজীবন ছুটেই গেলাম হয়নি বসে থাকা । যাই যদি আজ উত্তরে ভাই কালকে যাব দক্ষিণে পশ্চিমে যাই দিনের বেলা রাত্তিরে ঘুরি পুবকে চিনে । হিল্লী দিল্লী স্বদেশ বিদেশ চক্করের আর নাই রে শেষ প্রাণটা বাঁচে চাকা দুটো কেউ যদি ভাই নেয় কিনে । প্রায়ই ভাবি আপন মনে ফুরোবে …
ভোরের আগের যে প্রহরে স্তব্ধ অন্ধকার –‘ পরে সুপ্তি-অন্তরাল হতে দূর সূর্যোদয় বনময় পাঠায় নূতন জাগরনী, অতি মৃদু শিহরনী বাতাসের গায়ে ; পাখির কুলায়ে অস্পষ্ট কাকলি ওঠে আধোজাগা স্বরে, স্তম্ভিত আগ্রহ ভরে অব্যক্ত বিরাট আশা ধ্যানে মগ্ন দিকে দিগন্তরে ও কোন তরুন প্রানে করিয়াছে ভর, অন্তর্গূঢ় সে প্রহর আত্ম-অগোচর । চিত্ত তার আপনার গভীর অন্তরে …
